« »

Wednesday, August 18, 2010

স্মৃতির পাতা জুড়ে চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত


[বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতে না হোক ক্রীড়প্রেমীদের মনে যার নাম গেঁথে থাকবে তার নাম চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফত। তার সুনিপুণ ভাঁড়ামোতে আমাদের মাতিয়ে রেখেছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। কী ফুটবল কী ক্রিকেট সবখানেই তার অবাধ বিচরণ ।সেই শরাফত ভাইয়ের বিভিন্ন কমেন্ট্রি থেকে তার চরিত্রের কিছু বিশেষ দিকগুলোকে পাঠকের কাছে পৌঁছাতেই আমার এই প্রয়াস ]


ভুলোমনা শরাফত ভাই

শরাফত ভাইয়ের ভুলোমনা মনের পরিচয় আমরা পাই যখন তিনি কমেন্ট্রি দিতে দিতে হারিয়ে যান সেই সাঠে গোলমাল খেয়ে যায় বাক্যে তার শব্দ বিন্যাস। উদাহরণ- " খেলার মাঠের খবর জানাতে গেলে বলতে হবে এখনও মেঘাচ্ছন্ন মাঠ আর কর্দমাক্ত আকাশ বিরাজ করছে"। কিংবা, " বোলার শ্রীনাথ তার ট্রাউজার খুলে আম্পায়ারের হাতে দিয়ে চলে যাচ্ছেন বোলিং রান আপের শেষ প্রান্তে।"

সংগীত মনা শরাফত ভাই

" পরের বল। এবারে কিন্তু একটু ঠুকে দিয়েছিলেন। বলটি ব্যাটসম্যান মাশরাফির ব্যাটের কানা ছুঁয়ে স্লিপের উপর দিয়ে চলে গেলো সীমানার বাইরে।" আরো চারটি রান। বাংলাদেশের রান গিয়ে দাঁড়ালো একশত তেইশ। এক দুই তিন। আমার কিন্তু জনপ্রিয় একটি হিন্দী গানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।"- ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রায় অলআউট হবার আগে এমনিভাবে গানের কথা মনে পরাতেই তার সংগীত পিপাসু মন আমরা খুঁজে পাই।

অতিথিপরায়ণ শরাফত ভাই

"সুপ্রিয় দর্শক মণ্ডলী আঝকের মত আমার বলার পালা শেষ। এরপর ইংরেজিতে বলা শুরু করবেন শামীম । আমি আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। তবে বেশি দূর যাচ্ছি না। মাঠের দক্ষিণ পূর্ব পাশের একটি অফিসের ছয়তলায় আমি বসি। আপনারা কেউ এখানে এলে অবশ্যই আমার সাথে দেখা করে যাবেন। আমি খুব খুশি হবো।"- এমসিসি জাতীয় কোন দলের সাথে খেলার কমেন্ট্রি দিতে গিয়ে টার করা এই ডায়লগটি তার মাঝেকার অতিথি পরায়ণ বাঙালি রূপটিকে তুলে ধরে।

সাহিত্যিক শরাফত ভাই

নিটল টাটা জাতীয় ফুটবল লিগের কোন ম্যাচে রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক হিমু ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছিলেন। তাকে পুরস্কার নিতে ডাকার আগে এবং পরেকার কথোপকন গুলো এরকম-
" আজকের ম্যাচে জয় কোন দলের হয়নি , কিন্তু একজন ছিলেন মাঠে, দৃপ্ত অবিচল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ দুর্বার গোলরক্ষক হিমু। তিনি একের পর এক হা হয়ে যাওয়া গোলমুখ থেকে বলকে রক্ষা করেছেন। হিময়ু আপনি ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ। (করতালি । হিমুব পুরস্কার নিয়ে আসল শরাফতের দিকে)।
হিমু আপনি কি আজকে প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিলেন কোন বলকে জালে ঢুকতে দেবেন না? সাহিত্যিক শরাফত ভাইয়ের সাহিত্যিক প্রতিদান হিমু দিতে পারলেন না। তিনি বললেন, না। তেমন কোন পরেতিজ্ঞা আছিল না। যাস্ট খেলার দরকার খেলছি। ভাল্লাগতাসে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হইছি।"

ধোঁকাবাজ শরাফত ভাই

শরাফত ভাইয়ের অতি অভিনয়ে ধোঁকা খায়নি এমন লোক খুব কমই আছে। আমরা যারা খেলা দেখি বা শুনি সবাই এর সাথে পরিচিত- "ছয় হতে পারে কিন্তু বোল্ড "। তবে শরাফত ভাই সেরা দেখিয়েছিলেন যে ঘটনা সেটাই বলি। রেডিওর ঘোষিকা বললেন, সুপ্রিয় শ্রোতামণ্ডলী বাংলাদেশ এবং কেনিয়ার মাঝেকার ফাইনাল খেলা বৃষ্টিতে বন্ধ। মাঠের খবর জানাতে আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি কিলাত ক্লাব মাঠে।" এরপরে ভেসে এল চেনা কন্ঠের উদাত্ত স্বর" মেঘ কেটে গেছে, সূর্য উঠেছে। চারদিকে বইছে সুবাতাস। ( আমরা সবাই খেলা শুরুর প্রত্যাশায় নড়ে চড়ে বসলাম)। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই সুবাতাস দীর্ঘস্থায়ী হোক । এদিকে মাঠের খবর বৃষ্টি কিন্তু পড়ছে।"( গালি দিতে দিতে আমজার সামনের অপেক্ষমান শ্রোতারা চলে গেলো) ।

নস্টালজিক শরাফত ভাই

শরাফত ভাই মাঝে মাঝে কমেন্ত্রি দিতে দিতে নস্টালজিক হয়ে যান। ফল শ্রোতাদের বিভ্রান্তি আর রাগের কারণ। ১৯৯৯ সালে ধাকায় জিম্বাবের সাথে ম্যাচের কমেন্ত্রি- " সুপ্রিয় শ্রোতারা দর্শকদের করতালি শুনে আপনারা বুঝতে পারছেন মাঠে নামছেন মোঃ রফিক। তার কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যায় অনেক কথা। বাংলাদেশের প্রথম জয়ে ব্যাট হাতে কিন্তু রফিক ৭৭ রান করেছিলেন। সেদিন তিনি একটি বিশাল ছক্কা মেরেছিলেন। তাছাড়াও বোলার হিসাবে সেই সার্ক ক্রিকেট ১৯৯২ সালে--আউট আ--উ--ট,মোঃ রফিক আউট হয়ে গেলেন এইমাত্র, যাহোক যে কথা বলছিলাম......."।

দার্শনিক শরাফত ভাই

শরাফত ভাই নিজের নিঃশেষতার দর্শনে তার বিশ্বাসের জানান দেন ২০০৬ সালে কেনিয়ার সাথে ম্যাচে রাজিনের সেঞ্চুরিতে ম্যাচ জেতার দিন। তার কমেন্ট্রি ছিলো এমন, আরে জিতবেই তো। আমি আগেই বলেছিলাম।, বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করবে। আর শুধু আঝকে কেন, বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ জিতবে। সেদিন হয়তো আমি থাকবো না। কিন্তু যারা আমার কমেন্ট্রি শুনছেন তারা থাকবেন। তারা বলবেন , ঐ লোকগুলো বলেছিলো,,,,,,,,,,,,,,,,

দেশপ্রেমিক শরাফত ভাই
সুপ্রিয় দর্শকমণ্ডলী বাংলাদেশ আজ বারমুডাকে হারিয়ে সুপার এইটে খেলার গৌরব অর্জন করলো। এ জয় অনেক দিনের আশার, অনেকদিনের আকাঙ্খা অনেক বড় সম্মানের অনেক বিশাল অর্জন------সুপ্রিয় দর্শক আমি প্রথমে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম দুটি কথা। সাবাশ বাংলাদেশ। সাবাশ বাংলাদেশ। তোরা সব জয়ধ্বণি কর। ওই নতুনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখীর ঝড়.........

বিভিন্ন দিক আলোচনায় ভালো খারাপ থাকলেও শেষ অংশটুকুর জন্যই তারে আমি ভালো পাই। তাকে দেখেও যদি বাঙালি প্লেয়াররা একটু দেশপ্রেম শিখত।

0 টি মন্তব্য:

Post a Comment

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Best WordPress Themes